নাশকতাকারীদের দেখামাত্র
গুলির বিধান
আসলেই কি
আইনে আছে?
Police Regulations Bengal (PRB) হলো পুলিশের জন্য পূর্ণাঙ্গ
আচরণ-বিধান। কর্তব্যকর্ম
সম্পাদনে পুলিশ
বিভাগের সব
সদস্য এ
আচরণ-বিধান
মেনে চলতে
বাধ্য।
দাঙ্গা ও
গোলযোগের সময়
পুলিশ কখন,
কীভাবে, কতটা
গুলি বা
আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করবে, সে বিষয়ে
PRB বা পুলিশ
প্রবিধানের চতুর্থ অধ্যায়ের ষষ্ঠ পরিচ্ছেদে
বিস্তারিত বলা আছে।
১৫৩ ধারায় পুলিশকে
তিনটি ক্ষেত্রে
আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে:
১. ব্যক্তির আত্মরক্ষা
বা সম্পত্তি
রক্ষার অধিকার
প্রয়োগে,
২. বেআইনি
সমাবেশ ছত্রভঙ্গ
করতে এবং
৩. কতিপয় পরিস্থিতিতে
গ্রেপ্তার কার্যকর করার জন্য (ধারা
১৫৩-ক)।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৬
ধারার অধীনেও
পুলিশের বল
প্রয়োগ চলে। শক্তি
প্রয়োগে কেউ
গ্রেপ্তার, প্রতিরোধ বা এড়ানোর চেষ্টা
করলেই কেবল
আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার। তবে তাতে
যেন মৃত্যুর
ঘটনা না
ঘটে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন
কারাদণ্ডযোগ্য কোনো অপরাধে অভিযুক্ত হলেই
এ ক্ষেত্রে
মৃত্যু ঘটানো
যায় (ধারা
১৫৩-ঘ)।এ
ছাড়া এ সম্পর্কে আরো জানতে ১৫৩-গ,
১৫০-খ
ও ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৭-১২৮ ধারাগুলো
দেখুন ।
পুলিশের গুলি প্রসঙ্গে আমাদের সংবিধান কি বলে দেখা যাক।
সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে,
আইনের আশ্রয়লাভ
এবং আইনানুযায়ী
ও কেবল
আইনানুযায়ী ব্যবহার লাভ, যেকোনো স্থানে
অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের এবং সাময়িকভাবে
বাংলাদেশে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য
অধিকার।
আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোনো ব্যবস্থা
গ্রহণ করা
যাবে না,
যাতে কোনো
ব্যক্তির জীবন,
স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির
হানি ঘটে।
৩২ অনুচ্ছেদ
হুঁশিয়ার করছে,
আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতা
থেকে কোনো
ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাবে না।
৩৫(৩)
অনুচ্ছেদ জানাচ্ছে,
ফৌজদারি অপরাধের
দায়ে অভিযুক্ত
প্রত্যেক ব্যক্তি
আইনের দ্বারা
প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত
বা ট্রাইব্যুনালে
দ্রুত ও
প্রকাশ্য বিচারলাভের
অধিকারী হবেন।
অন্যদিকে এ
বিষয়ে মানবাধিকারের
সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের
অবস্থান আরও
কঠোর।
ওই ঘোষণাপত্রের
৩ অনুচ্ছেদ
বলছে, প্রত্যেকেরই
জীবনধারণ, স্বাধীনতা ও ব্যক্তি নিরাপত্তার
অধিকার রয়েছে।
৭ অনুচ্ছেদ
ঘোষণা করছে,
আইনের কাছে
সকলেই সমান। কোনোরূপ
বৈষম্য ছাড়া
সকলেই আইনের
দ্বারা সমান
সুরক্ষা পাবে।
১০ অনুচ্ছেদ
জানাচ্ছে, প্রত্যেকেরই তার অধিকার ও
দায়িত্বসমূহ এবং তার বিরুদ্ধে আনীত
যেকোনো ফৌজদারি
অভিযোগ নিরূপণের
জন্য পূর্ণ
সমতার ভিত্তিতে
একটি স্বাধীন
ও নিরপেক্ষ
বিচার-আদালতে
ন্যায্যভাবে ও প্রকাশ্যে শুনানি লাভের
অধিকার আছে।
১১(১)
অনুচ্ছেদের কণ্ঠেও ভিন্নরূপে প্রায় একই
সুর—দণ্ডযোগ্য
অপরাধে অভিযুক্ত
হলে প্রত্যেকেরই
আত্মপক্ষ সমর্থনের
নিশ্চয়তা দেয়
এমন গণ-আদালত কর্তৃক
আইনানুযায়ী দোষী সাব্যস্ত না হওয়া
পর্যন্ত নির্দোষ
বলে বিবেচিত
হওয়ার অধিকার
আছে।
অতএব, উপরিউক্ত বিধি-বিধান বিশ্লেষণ
করলেই দেখা
যায়,নাশকতাকারীকে
বিচার ছাড়া
‘দেখামাত্র গুলির নির্দেশ’ কেবল বেআইনিই
নয়, এটা
একই সঙ্গে
অসাংবিধানিক এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদের
পরিপন্থী।
সংগ্রহে..... শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ , আই আই ইউ সি ।